বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নেত্রকোণায় ‘ভুল বুঝিয়ে’ থানায় অপমৃত্যুর অভিযোগ, স্থানীয়দের ক্ষোভ 

  • প্রতিনিধি, নেত্রকোণা   
  • ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১০:০৩

মামলার বাদী প্রয়াত আক্কাছ মিয়ার ভাতিজা মিলন আহমেদ বলেন, ‘আমার চাচা শ্রমিক শ্রেণির লোক ছিলেন এবং খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। আমার চাচার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় কিল-ঘুষি, লাথি মারায় মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিক বোঝা যায়নি। পরে উন্নত চিকিৎসার অভাবে তিনি মারা যায়। গরিব মানুষ বলে ভালো চিকিৎসা করতে পারেননি। সঠিক বিচারের আশায় পুলিশের আশ্রয় নেয়া হয়। তাতেও অবহেলা করা হয়েছে। এরপর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের বাহাম গ্রামের আক্কাছ মিয়ার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রয়াত আক্কাছ মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়াকে ভুল বুঝিয়ে কলমাকান্দা থানায় অপমৃত্যুর অভিযোগ করানোয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, আক্কাছ মিয়া নারিকেল গাছ ছাঁটাইয়ের কাজের পাশাপাশি অন্যের বাড়ির লাকড়ি কাটার কাজ করতেন। তাকে হত্যায় জড়িতরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। আক্কাছের ওপর হামলাকারীরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাদিস ও রিপন। মারপিটের সময় উপস্থিত ছিলেন হাদিসের বড় ভাই ইসমাইল।

স্থানীয়রা জানান, গত ২ জুন সন্ধ্যাহালা এলাকায় নতুন বেড়িবাঁধের ওপর মারধরের ঘটনাটি ঘটে। এ নিয়ে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মীমাংসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই উন্নত চিকিৎসার অভাবে আক্কাছ মিয়ার মৃত্যু হয় গত ১৩ জুন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মারপিটে আক্কাছ মিয়ার মৃত্যুর ঘটনাটি থানায় অপমৃত্যুর অভিযোগ হিসেবে দায়ের করা হয়, যা খুবই দুঃখজনক। এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দরকার।

জানতে চাইলে সন্ধ্যাহালা গ্রামের বাসিন্দা রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আক্কাছ মিয়া খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। আক্কাছ মিয়া কেন সন্ধ্যাহালা এলাকায় নতুন বেড়িবাঁধ দিয়ে ফকির চান্দুইল বাজারে যাচ্ছিল, সেটাই তার অপরাধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে বেড়িবাঁধের কাজ করেন হাদিস মিয়া। কাজের গুণগত মান নিয়েও এলাকাবাসীর সন্দেহ রয়েছে।’

বাহাম গ্রামের দেলোয়ার হোসেন আনসারী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে হাদিস মারপিট করে আক্কাছ মিয়াকে মেরে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের ওপর মহলের প্রভাবের কারণে এলাকার লোকজন গ্রাম্য সালিশ করতে পারে নাই হাদিসের ওপর।

‘আমাদের কথা হলো কেমন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে, তা দিয়ে হেঁটে গেলে ভেঙে যাবে?’

বাহাম কান্দারবাড়ীর বাসিন্দা আলমাস বলেন, ‘হাদিস ও তার ভাগনে রিপন, আক্কাছ মিয়ার ওপর হামলা করে এবং হাদিসের বড় ভাই ইসমাইল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হামলার সময় বাধা দেননি, কিন্তু অন্যান্য লোকজন হামলাকারীদের হাত থেকে আক্কাছ মিয়াকে রক্ষা করলেও ভালো মানের চিকিৎসার অভাবে তিনি মারা গেছেন।

‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এলাকাবাসী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

আক্কাছের ছেলে শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেলে আমি কলমাকান্দা থানাধীন সিধলী এলাকায় অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়িতে যাই। সেখানে কর্তব্যরত এসআই (উপপরিদর্শক) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে আমার বাবার মৃত্যুর ঘটনার বিবরণ দিই। তিনি আমাকে বলেন, তোমার বাবার পোস্টমর্টেম করতে হলে অপমৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করতে হবে।

‘আমি বললাম, মামলা-মোকদ্দমা সম্পর্কে তো কোনো কিছু বুঝি না। যেভাবে করলে আমার বাবার মৃত্যুর সঠিক বিচার পাই, সেই ব্যবস্থা করেন। তারপর তিনি কাগজে আমার স্বাক্ষর নেন। আমার বাবার পোস্টমর্টেম করে লাশ দাফন সম্পন্ন করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন এসআই মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আমাকে ফোন দিয়ে বললেন ফাঁড়িতে যে কাগজটায় স্বাক্ষর করছিলা, তাতে ভুল হয়েছে। কলমাকান্দা থানায় সঠিক করে স্বাক্ষর দিতে হবে; আমার সাথে থানায় যাইতে হবে। আমি থানায় যাই। সেখানে আরেকটা কাগজে স্বাক্ষর করি।

‘এরপর জানতে পারলাম আমি যে কাগজে স্বাক্ষর করেছি এতে করে আমার বাবার মৃত্যুর সঠিক বিচার পাব না। এ বিষয়ে আমার চাচাত ভাই মিলনকে জানালে সে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।’

মামলার বাদী প্রয়াত আক্কাছ মিয়ার ভাতিজা মিলন আহমেদ বলেন, ‘আমার চাচা শ্রমিক শ্রেণির লোক ছিলেন এবং খুবই সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। আমার চাচার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় কিল-ঘুষি, লাথি মারায় মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিক বোঝা যায়নি। পরে উন্নত চিকিৎসার অভাবে তিনি মারা যায়।

‘গরিব মানুষ বলে ভালো চিকিৎসা করতে পারেননি। সঠিক বিচারের আশায় পুলিশের আশ্রয় নেয়া হয়। তাতেও অবহেলা করা হয়েছে। এরপর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার চাচার মৃত্যুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

আক্কাছ মিয়ার স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী মানুষের বাড়িতে কাজকর্ম করত। তা দিয়ে সংসার চলত। এখন খুবই অসহায় অবস্থায় আছি।

‘মেয়েরা বড়। এক ছেলে ছোট। আমি দিশেহারা হয়ে গেছি। আমার স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাই।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কলমাকান্দা থানাধীন সিধলী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, আক্কাছের মৃত্যুর রহস্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলেই বোঝা যাবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর